বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাসে পুরান ঢাকার বিউটি বোর্ডিং একটি অবিস্মরণীয় নাম। বাংলাবাজারের বইয়ের বাজার পেরিয়ে, শ্রীশদাস লেনের গহ্বরে অবস্থিত এই বোর্ডিংটি যেন কালের সাক্ষী। বহু কবি-সাহিত্যিকের সৃষ্টিশীল আড্ডায় মুখরিত এই স্থানটি বাইরে থেকে কিছুটা জীর্ণ মনে হলেও, এর প্রতিটি ইট-পাথরে মিশে আছে ইতিহাসের স্মৃতি। বিউটি বোর্ডিং শুধু একটি বোর্ডিং নয়, এটি বাংলা সাহিত্যের এক গৌরবময় অধ্যায়ের সাক্ষ্য বহন করে।
ইতিহাস
১৯৪৯ সালে প্রহ্লাদ চন্দ্র সাহা ও তাঁর ভাই নলিনী মোহন সাহা ১১ কাঠা জমির উপর বিউটি বোর্ডিং প্রতিষ্ঠা করেন। নলিনী মোহনের বড় মেয়ে বিউটির নামানুসারে এই বোর্ডিংয়ের নামকরণ করা হয়। শুরু থেকেই বিউটি বোর্ডিং হয়ে ওঠে কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাংবাদিক, চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা ও গায়কসহ নানা পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আড্ডার কেন্দ্র। এখানে এসেছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, পল্লীকবি জসীমউদ্দীন এবং হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো মহান ব্যক্তিত্ব। সে সময় সাহিত্য-সংস্কৃতির আড্ডার জন্য আরও কিছু জায়গা থাকলেও বিউটি বোর্ডিং সকলের হৃদয়ে জয় করেছিল অকৃত্রিম ভালোবাসা।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় এই বাড়ির মূল মালিক জমিদার পরিবার সম্পত্তি বিক্রি করে ভারতে চলে যান। এরপর সুধীর চন্দ্র দাস এখানে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন, যেখান থেকে সোনার বাংলা নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হত। ১৯৪৯ সালে সোনার বাংলা পত্রিকার অফিস কলকাতায় স্থানান্তরিত হলে, সুধীর চন্দ্র দাসের কাছ থেকে প্রহ্লাদ চন্দ্র সাহা ও নলিনীকান্ত সাহা এই জায়গাটি কিনে নেন এবং আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরাঁর ব্যবসা শুরু করেন।